নওগাঁয় হেলমেট পরে হামলার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এসব ঘটনায় তিন ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতদের একজন বিএনপির, একজন জামায়াতের ও অন্যজন বেসরকারি কোম্পানির বিক্রয়কর্মী। দেশে নির্বাচন চলাকালে এমন ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে পুরো জনপদে। বিএনপির অভিযোগ, এসব হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত। বিরোধী শক্তিকে কোণঠাসা করতে এ এলাকায় ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হচ্ছে। তবে পুলিশের দাবি, জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। নওগাঁর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ভালোই ছিল। তবে গত সেপ্টেম্বর থেকে দুর্বৃত্তদের দৌরাত্ম্য বাড়তে থাকে। বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বেশ কয়েকজন হামলার স্বীকারও হন। এরপর চলতি মাসে এ ধরনের আরও কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটে। গত সোমবার (২০ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুরে শেষ পৃষ্ঠার পর নিচ্ছেন। এ ঘটনায় তার স্ত্রী বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এতে গ্রেপ্তারও হয়েছে দুজন। আবুল হোসেন জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে।এ ছাড়া গত ২৩ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টার দিকে রানীনগর উপজেলার বরগাছা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু রায়হানকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় থানায় এখনো মামলা করেননি স্বজনদের কেউ। এরপর ১২ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রানীনগরের পারইল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি জাহিদুর রহমান জাহিদ ইউপি কার্যালয়ে ঢুকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। বর্তমানে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন বলেন, আতঙ্ক সৃষ্টি করতে নেতা-কর্মীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হচ্ছে। চলমান আন্দোলনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই টার্গেট করে হামলা চালানো হচ্ছে।এ নিয়ে নওগাঁর রানীনগর, আত্রাই ও সদর হেলমেট পরা দুর্বৃত্তের হামলায় মামুনুর রশিদ মামুন নামের এক যুবক নিহত হন। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানির বিক্রয়কর্মী ছিলেন। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও পুলিশ জানায়, বিকেলে কোম্পানির পণ্য বিতরণ শেষে সদরে ফেরার পথে বক্তারপুর এলাকায় দুর্বৃত্তরা মামুনের পথ রোধ করে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। রাতে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার বাবা আবুল কালাম বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। এ ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এর আগে গত শনিবার (১৮ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে শহরের ইয়াদ আলীর মোড় এলাকায় কামাল আহমেদ (৫২) নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি নওগাঁ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সভাপতি। এ হামলার সময়ও দুর্বৃত্তরা হেলমেট ও মাস্ক পরা ছিল। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে তার ছেলে মামলা করেছেন। পুলিশ এ ঘটনাতেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে ওই রাতেই মহাদেবপুরে মামুনুর রশীদ মামুন নামের এক ব্যবসায়ী খুন হন। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মামলা করা হলে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জেলায় দুর্বৃত্তের হামলার প্রথম ঘটনাটি ঘটে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে। সেদিন মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফেরার পথে রাতে রানীনগর উপজেলার আমগ্রাম মোড়ে যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেনকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে আহত করে। ওই ঘটনায় মামলা করা হয়নি। এ ঘটনার পরের দিন ২৫ সেপ্টেম্বর আত্রাই উপজেলায় স্কুল থেকে মোটরসাইকেলে ফেরার পথে মালিপুকুর বাজার এলাকায় শিক্ষক আবুল হোসেনের ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। হেলমেট পরে হামলা করছে উপজেলায় সাম্প্রতিক সময়ে পাঁচটি ঘটনা ঘটল। কিন্তু এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। বিরোধী শক্তিকে কোণঠাসা করতে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হচ্ছে বলেও এই নেতার অভিযোগ। নওগাঁর স্থানীয় আইনজীবী ডি এম আব্দুল বারী বলেন, নির্বাচনী হাওয়া শুরু হয়েছে অথচ এ রকম সময়ে পরপর হামলা, হত্যা, ছিনতাইয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে জেলায়। মুখোশধারী ব্যক্তিরা মানুষ মেরে ফেলছে, এটি উৎকণ্ঠার। দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা দরকার। এ ব্যাপারে পুলিশকে আরও তৎপর হতে হবে। এসব হামলা প্রসঙ্গে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. গাজীউর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আত্রাই, রানীনগর, নওগাঁ সদর ও মহাদেবপুরে যে ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর প্রায় সব ক্ষেত্রে মামলা করা হয়েছে। আত্রাই ও মহাদেবপুরের ঘটনায় মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সদর থানার মামলাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। এসব ঘটনা একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে এ রকম কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।